Wednesday, May 18, 2011

একাদশ ভাষা শহিদ কে আমাদের সশ্রদ্ধ প্রনাম


শাহিদ কমলা ভট্টাচার্য্য'র আবক্ষ মূর্তি উন্মোচিত হলো শিলচরে
- সৌজন্য: সাময়িক প্রসঙ্গ

বছর ঘুরে আবার এলো ১৯শে মে |  ভারতে প্রথম বারের মতো মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার জন্য শহিদ হয়েছিলেন একাদশ তরূণ-তরূণী | আজ ৫০ টি বছর অতিক্রান্ত, কিন্তূ প্রত্যক্ষ্যদর্শী দের কাছে সেই ঘটনা আrজও তাজা... আর নতুন প্রজন্মের কাছে এক কিংবদন্তি ! আজ থেকে ৫০ বছর আগে, ১৯৬১ ইংরেজি'র এই দিন টি তে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে কমলা ভট্টাচার্য, সচিন্দ্র পাল, বিরেন্দ্র সূত্রধর, কানাইলাল নিয়োগী, চন্ডিচরণ সূত্রধর, সত্যেন্দ্র দেব, হিতেশ বিশ্বাস, কুমুদ রঞ্জন দাস, তরণী দেবনাথ, সুনীল সরকার এবং সুকুমার পুরকায়স্থ নিজেদের প্রানের আহুতি দিয়েছিলেন | কেউ বলেন অভিশপ্ত, কেই বলেন ঐতিহাসিক, আবার কারো কাছে গৌরবময়... কিন্তূ দিনটি যে বরাক-বাসীদের জন্য স্মরণীয় এবং ঐতিয্যপূর্ণ, তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই | 


অসমের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বিমলাপ্রাসাদ চলিহা এক অধ্যাদেশে 'অসমীয়া' ভাষা কে সমস্ত রাজ্যের সরকারি কার্যালয়ে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক ঘোষনা করার পরিপ্রেক্ষিতে বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষীদের মধ্যে এক প্রবল জনরোষের সৃষ্টি হয় | বরাক বাসীদের জন্য এটা ছিল মাতৃ ভাষার অস্তিত্ত রক্ষার লড়াই... এই প্রতিবাদী আন্দোলন রাজ্য-সরকার সহজভাবে নিতে পারে নি; অবশেষে, এই জন আন্দোলন কে আয়ত্তে আনতে শিলচর রেল স্টেশন এ প্রাতিবাদরত জনসাধারণ কে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করে এবং ফলঃস্বরূপ, ঝরে গেল ১১ টি তর-তাজা প্রাণ | নিজেদের প্রানের বিনিময়ে তাঁরা সরকার কে বাধ্য করেন তাদের জারি করা অধ্যাদেশ কে রদ করতে | আজ শিলচর তথা বরাক উপত্যকায় বাংলা যে সরকারি ভাষা, আমরা বাংলায় কথা বলি, বাংলা পড়তে পারি... তার জন্যে আমরা তাঁদের কাছে ঋণী এবং চির-কৃতজ্ঞ |


সেই ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ভাষা শহিদ স্টেশন, শিলচর
- Photo © CFS Team

কিন্তূ  শুধুমাত্র বছরে  একবার সেই ঐতিহাসিক বলিদান এর কথা স্মৃতিচারণ করে আমরা এই ঋণপাশ থেকে মুক্ত হতে পারি না... তাঁরা প্রাণ দিয়েছেন মাতৃভাষা'র জন্য, কিন্তূ তাঁদের স্বপ্ন ছিল তাঁদের মাতৃভূমি'র সার্বিক উন্নয়ন, যা আজও অসম্পূর্ণ | 


বরাক উপত্যকা'র প্রতি কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের আচরণ আজও বিমাতৃসুলভ, বরাক উপত্যকা ও শিলচর আজও উন্নতি এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত...  আজও শিলচর-বরাকে'র জনসাধারণ নিজেদের মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছেন, লড়ছেন !

১৯শে মে  হোক সবার সংগ্রামের প্রতীক ! বরাক-বাসীদের এই সংগ্রাম সফল হোক এবং আমাদের এক সুন্দর সুগঠিত শিলচরএর স্বপ্ন শীঘ্রই বাস্তবায়িত হোক... 


4 comments:

  1. বাহ বাংলাতে লেখা দেখে ভালো লাগছে। আমার একটাই আক্ষেপ এই ব্লগারদের ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না। স্বনামে জানতে পারিকি?

    ReplyDelete
  2. শিলচরে শহীদ হলেন বলেই ৬১র আন্দোলনতো কেবল বরাকে হয় নি। হয়ে ছিল সমগ্র পূর্বত্তরে। এরই প্রতিক্রিয়াতে নাগালেন্ড মণিপুর রাজ্যগুলো অসম থেকে বেরিয়ে যায়। ৮৬র আন্দোলনে আমি সক্রিয় সদস্য ছিলাম। তখনো আন্দোলন গোটা রাজ্যে হয়েছিল। অবাঙালিরাও যোগ দিয়েছিলেন। এই সত্যকে অস্বীকার করা কেন?

    ReplyDelete
  3. @ সুশান্ত কর: স্যার, আমরা এই লেখাটির মাধ্যমে শিলচর এর সেই ঐতিহাসিক ঘটনা কে স্মরণ করছি | আমাদের উদ্যেশ্য কখনই অন্য কোন জাতি বা ভাষা কে ছোট করে দেখা নয় | আপনার জানানো তথ্যগুলো আমাদের অজানা ছিল, এবং এসব আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ |

    যেহেতু আপনি ৮৬'র আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন... আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি, যদি আপনি ৮৬'র আন্দোলনের বিস্তৃত বর্ণনা আমাদেরকে লিখে পাঠান, আমরা এবং এই ব্লগ এর পাঠকরা খুবই উপকৃত হবেন | আমরা আপনার লেখাটি কে আপনার নাম এবং ছবি সহ এই ব্লগ এ প্রকাশ করে খুশি হব | আমাদের ই-মেইল concernforsilchar@gmail.com

    আমাদের লেখার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আমরা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখছি ... যদিও আমরা এখানে পরিচিতি থেকে উদ্যেশ্যটি কে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি |

    - ধন্যবাদ

    ReplyDelete
  4. আচ্ছা, আপনাদের এই লেখাটা গুরুচণ্ডালী বলে একটা কাগজ (যাদের ওয়েব সংস্করণও রয়েছে) নিতে চাইছেন। আপনাদের আপত্তি রয়েছে কি? না থাকলে এই আই ডিতে ওদের জানাতে পারেন,guruchandali@gmail.com। ৮৬র আন্দোলন নিয়ে স্মৃতি থেকে কখনো লেখার চেষ্টা করব, হাতের কাছে দলিল দস্তাবেজ নেই কিনা। আসলে এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনও জড়িয়েছিল। আর ৮৬র পরেও আমরা দীর্ঘদিন এর ধারাবাহিকতা রাখার চেষ্টা করেছিলাম। সংগ্রাম সমন্বয় সমিতির কথা শুনে থাকতে পারেন। আমি তার কাছাড় জেলা সমিতির সম্পাদক ছিলাম। ৮৬র ১৫ আগষ্ট অব্দি বর্ণনা তবু লেখা যায়। লিখব নহয় কখনো সময় পেলে।

    ReplyDelete

Silchar through the Lense